বরিশালের মুলাদী উপজেলায় গত এক সপ্তাহে কুকুরের কামড়ে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। কুকুরের কামড়ে আহতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলায় ভ্যাকসিন সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ওষুধ বিক্রেতারা।


অপরদিকে কুকুরে কামড়ানোর ঘটনায় স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কুকুর নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আরও ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলায় কুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কুকুরগুলো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় পথচারীদের কামড়ে দিচ্ছে। গতকাল ২৬ ফেব্রুয়ারি মুলাদী হাসপাতালে সামনে ৩/৪টি কুকুর একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাঠ কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহসহ ৩ জনকে কামড়ে দিয়েছে। একই দিন মুলাদী প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে স্কুল যাওয়ার সময় রিপা নামের ছাত্রীকে কামড়ে দিয়েছে। এছাড়া কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে ভ্যাকসিন নিয়েছেন ব্যবসায়ী শাহজালাল, গৃহবধূ নারগিস আক্তার, সুরমা আক্তার, ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম, হাসান, ফারুকসহ প্রায় ৩০ জন।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি উপজেলার গাছুয়া ইউনিয়নের শ্রীমতি গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের ৮ বছরের মেয়ে নুসরাত জাহানকে কুকুরে কামড়ায়। ভ্যাকসিন সম্পর্কে ধারণা না থাকায় নুসরাতের বাবা-মা স্থানীয় ফকির ও ওঁঝা থেকে পানি পড়া ও মিঠা পড়া নিয়ে খাওয়ায়। পরবর্তীতে নুসরাত গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে ২৩ ফেব্রুয়ারি মুলাদী হাসপাতালে নিয়ে আসে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠালে পথিমধ্যে নুসরাত মারা যায়।

মুলাদী উপজেলা শহরের এক ওষুধ বিক্রেতা জানান, কুকুরে কামড়ানো আহতদের জন্য যে ভ্যাকসিন দেয়া হয় তা ফ্রিজে রাখতে হয়। তাই সব দোকানে এ ধরনের ভ্যাকসিন রাখা সম্ভব হয় না। এভাবে অব্যাহতভাবে কুকুর মানুষকে কামড়াতে থাকলে উপজেলায় ভ্যাকসিন সংকট দেখা দিতে পারে।


এ ব্যাপারে মুলাদী পৌর মেয়র শফিক উজ্জামান রুবেল জানান, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় কুকুর নিধন অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব না হওয়ায় অসুস্থ কুকুরগুলোকে ভ্যাকসিন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে। এছাড়া কুকুর থেকে সতর্কভাবে চলাচলের জন্য সবাইকে আহ্বান জানান তিনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সাইয়েদুর রহমান জানান, কুকুরে কামড়ানোর পর যতদ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন দিতে হবে।

মুলাদী প্রতিনিধিঃ
মুলাদী বন্দরের সড়ক ও জনপদের ব্যস্ততম সড়টিতে যত্র-তত্র গাড়ি পার্কিংয়ে যান চলাচল ব্যবহ হওয়ার পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনার আশংকাও ব্যাপক ভাবে বেড়ে গেছে। প্রতিনিয়ত বরিশাল-মুলাদী-বাবুগঞ্জ-হিজলা সড়কের হাজার হাজার মানুষ যাতায়াতের জন্য মুলাদী বন্দরের ব্যস্ততম এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। যে সড়ক সংকির্ন হওয়ায় দুটি বাস এক সাথে যাতায়াত করতে পারেনা সেখানে যে যার মত করে ইজি বাইক, টমটম, অটোভ্যান, মটর সাইকেল সহ অবৈধ যানবাহন যত্র-তত্র রেখে প্রতিনিয়ত জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। 

সচেতন মহল মনে করে এসব যানবাহন এলোমেলো ভাবে রাখার ফলে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে। মুলাদী বন্দরের প্রতিনিয়ত এমন চিত্র দেখে সাধারন মানুষের মাঝে চলাচলে ভীতি ও শংকার সৃষ্টি হচ্ছে। মুলাদী বন্দরের চলাচলকারী লোকজন প্রত্যাশা করছে প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা এর বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহন করবে। এব্যাপারে আইন সৃঙ্খলা সভায় উত্থাপন করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অচিরেই এর বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন। 


ভাষা আন্দোলন  বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাবিতে সংগঠিত গণআন্দোলন। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। স্বাধীনতার পরপরই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কি হবে এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং উর্দুভাষী বুদ্ধিজীবীরা বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে  উর্দু। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে দাবি ওঠে, বাংলাকেও অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। কিন্তু পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলা ভাষার এ দাবিকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে। এতে ঢাকার ছাত্র ও  বুদ্ধিজীবী মহল ক্ষুব্ধ হন এবং ভাষার ব্যাপারে তাঁরা একটি চূড়ান্ত দাবিনামা প্রস্ত্তত করেন; দাবিটি হলো: পূর্ব পাকিস্তানে শিক্ষা ও সরকারি কার্যাদি পরিচালনার মাধ্যম হবে বাংলা আর কেন্দ্রীয় সরকার পর্যায়ে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে দুটি বাংলা ও উর্দু।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ছাত্রদের সভা (১৯৫২)

ভাষাসংক্রান্ত এই দাবিকে সামনে রেখে সর্বপ্রথম আন্দোলন সংগঠিত করে তমদ্দুন মজলিস। এর নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যাপক আবুল কাসেম। ক্রমান্বয়ে অনেক অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল সংগঠন এই আন্দোলনে যোগ দেয় এবং একসময় তা গণআন্দোলনে রূপ নেয়।
অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন ফোরামে শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমানের উদ্যোগে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রচেষ্টা চলে। এতে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৪৭ সালের ৬ ডিসেম্বর  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্রসভার আয়োজন করে। সভার পরও মিছিল-প্রতিবাদ অব্যাহত থাকে। এ মাসেরই শেষদিকে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়, যার আহবায়ক ছিলেন তমদ্দুন মজলিসের অধ্যাপক নূরুল হক ভূঁইয়া। পরের বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে পরিষদ সদস্যদের উর্দু বা ইংরেজিতে বক্তৃতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের কংগ্রেস দলের সদস্য  ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এ প্রস্তাবে সংশোধনী এনে বাংলাকেও পরিষদের অন্যতম ভাষা করার দাবি জানান। তিনি বলেন, পাকিস্তানের ৬ কোটি ৯০ লাখ মানুষের মধ্যে ৪ কোটি ৪০ লাখই পূর্ব পাকিস্তানের, যাদের মাতৃভাষা বাংলা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং পূর্ববাংলার মুখ্যমন্ত্রী  খাজা নাজিমুদ্দীন বিরোধিতা করলে এ দাবি বাতিল হয়ে যায়। এ খবর ঢাকায় পৌঁছলে ছাত্রসমাজ, বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকরা বিক্ষুব্ধ হন। আজাদ-এর মতো পত্রিকাও ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের আনা প্রস্তাবে যারা বিরোধিতা করেছিল তাদের সমালোচনা করে। পরে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন পরিচালনার জন্য একটি নতুন রাষ্ট্রভাষা পরিষদ গঠিত হয়, যার আহবায়ক ছিলেন শামসুল আলম।

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ একটি স্মরণীয় দিন। গণপরিষদের ভাষা-তালিকা থেকে বাংলাকে বাদ দেওয়া ছাড়াও পাকিস্তানের মুদ্রা ও ডাকটিকেটে বাংলা ব্যবহার না করা এবং নৌবাহিনীতে নিয়োগের পরীক্ষা থেকে বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাখার প্রতিবাদস্বরূপ ওইদিন ঢাকা শহরে সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। ধর্মঘটিদের দাবি ছিল বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা এবং পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা। ধর্মঘটের পক্ষে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এই শ্লোগানসহ মিছিল করার সময় শওকত আলী, কাজী গোলাম মাহবুব, শামসুল হক, অলি আহাদ,  শেখ মুজিবুর রহমান, আবদুল ওয়াহেদ প্রমুখ গ্রেপ্তার হন। আব্দুল মতিন, আবদুল মালেক উকিল প্রমুখ ছাত্রনেতাও উক্ত মিছিলে অংশ নেন; বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিরাট সভা হয়। একজন পুলিশের নিকট থেকে রাইফেল ছিনিয়ে চেষ্টা করলে পুলিশের আঘাতে মোহাম্মদ তোয়াহা মারাত্মকভাবে আহত হন এবং তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ১২-১৫ মার্চ ধর্মঘট পালিত হয়।

আন্দোলনের মুখে সরকারের মনোভাব কিছুটা নমনীয় হয়। মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন ছাত্রনেতাদের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। তবে চুক্তিতে তিনি অনেকগুলি শর্তের সঙ্গে একমত হলেও বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তাঁকে কোনো কিছুই মানানো যায়নি।

১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল  মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসেন। তিনি ঢাকার দুটি সভায় বক্তৃতা দেন এবং দুই জায়গাতেই তিনি বাংলা ভাষার দাবিকে উপেক্ষা করে একমাত্র উর্দুকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেন। এ সময় সারা পূর্ব পাকিস্তানেই ভাষা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। জিন্নাহর বক্তব্য তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়ে। ১৯৫০ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়; এর আহবায়ক ছিলেন আবদুল মতিন।
২২ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রাস্তা

১৯৫২ সালের শুরু থেকে ভাষা আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিতে থাকে। এ সময় জিন্নাহ ও লিয়াকত আলী খান উভয়েই পরলোকগত। লিয়াকত আলী খানের জায়গায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন খাজা নাজিমুদ্দীন। রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হওয়ার সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থারও অবনতি ঘটে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ মুসলিম লীগের প্রতি আস্থা হারাতে থাকে। ১৯৪৯ সালে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত হয় নতুন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। পূর্ব পাকিস্তানে বঞ্চনা ও শোষণের অনুভূতি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে এবং এখানকার জনগণ ক্রমেই এই মতে বিশ্বাসী হতে শুরু করে যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের জায়গায় তাদের ওপরে আরোপিত হয়েছে নতুন ধরনের আরেক উপনিবেশবাদ। এ প্রেক্ষিতে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন একটি নতুন মাত্রা পায়।
১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দীন করাচি থেকে ঢাকায় আসেন। তিনি পল্টন ময়দানে এক জনসভায় বলেন যে, প্রদেশের সরকারি কাজকর্মে কোন ভাষা ব্যবহূত হবে তা প্রদেশের জনগণই ঠিক করবে। কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে কেবল উর্দু। সঙ্গে সঙ্গে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় এবং ‘রাষ্টভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগানে ছাত্ররা বিক্ষোভ শুরু করেন। ৩০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট পালিত হয়। ৩১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধিদের এক সভায় ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়, যার আহবায়ক ছিলেন কাজী গোলাম মাহবুব। এ সময় সরকার আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাব পেশ করে। এর বিরুদ্ধেও তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি ( একুশে ফেব্রুয়ারি) সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে  হরতাল, জনসভা ও বিক্ষোভ মিছিল আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়।

এসব কর্মসূচির আয়োজন চলার সময় সরকার ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে সমাবেশ-শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আবুল হাশিমের (১৯০৫-৭৪) সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভা হয়। ১৪৪ ধারা অমান্য করা হবে কিনা এ প্রশ্নে সভায় দ্বিমত দেখা দেয় তবে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার সঙ্কল্পে অটুট থাকে।

পরদিন সকাল ১১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের একাংশে অবস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ছাত্রদের সভা হয়। সভা শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকসহ উপাচার্য ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার জন্য ছাত্রদের অনুরোধ করেন। তবে ছাত্র নেতৃবৃন্দ, বিশেষ করে আবদুল মতিন এবং গাজীউল হক নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে। ঢাকা শহরের স্কুল-কলেজের হাজার হাজার ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে সমবেত হয়। ছাত্ররা পাঁচ-সাতজন করে ছোট ছোট দলে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগান দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসলে পুলিশ তাঁদের উপর লাঠিচার্জ করে, ছাত্রীরাও এ আক্রমন থেকে রেহাই পায়নি। ছাত্রছাত্রীরা পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছোড়া শুরু করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের সামলাতে ব্যর্থ হয়ে গণপরিষদ ভবনের দিকে অগ্রসররত মিছিলের উপর পুলিশ গুলি চালায়। গুলিতে  রফিক উদ্দিন আহমদ,  আবদুল জববার,  আবুল বরকত (রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ শ্রেণীর ছাত্র) নিহত হয়। বহু আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তাঁদের মধ্যে সেক্রেটারিয়েটের পিয়ন আবদুস সালাম মারা যায়। অহিউল্লাহ্ নামে আট/নয় বছরের এক কিশোরও সেদিন নিহত হয়।

এ সময় গণপরিষদের অধিবেশন বসার প্রস্ত্ততি চলছিল। পুলিশের গুলি চালানোর খবর পেয়ে গণপরিষদ সদস্য মওলানা তর্কবাগীশ এবং বিরোধী দলের সদস্যসহ আরও কয়েকজন সভাকক্ষ ত্যাগ করে বিক্ষুদ্ধ ছাত্রদের পাশে দাঁড়ান। অধিবেশনে পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী  নূরুল আমীন বাংলা ভাষার দাবির বিরোধিতা অব্যাহত রেখে বক্তব্য দেন।

পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি ছিল গণবিক্ষোভ ও পুলিশি নির্যাতনের দিন। জনতা নিহতদের গায়েবানা জানাজার  নামায পড়ে ও শোকমিছিল বের করে। মিছিলের উপর পুলিশ ও মিলিটারি পুনরায় লাঠি, গুলি ও বেয়োনেট চালায়। এতে শফিউর রহমানসহ কয়েকজন শহীদ হন এবং অনেকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার হন। ছাত্ররা যে স্থানে গুলির আঘাতে নিহত হয় সেখানে ২৩ ফেব্রুয়ারি একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। ১৯৬৩ সালে এই অস্থায়ী নির্মাণের জায়গায় একটি কংক্রীটের স্থাপনা নির্মিত হয়।

গণপরিষদ বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিয়ে একটি বিল পাস করে। ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলন অব্যাহত ছিল। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অনুমোদনের মাধ্যমে এই আন্দোলন তার লক্ষ্য অর্জন করে। জাতীয় পরিষদে বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের (১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬) এক পর্যায়ে এর সদস্য ফরিদপুরের আদেলউদ্দিন আহমদের (১৯১৩-১৯৮১) দেওয়া সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী বাংলা ও উর্দু উভয় ভাষাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

১৯৫২ সালের পর থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য বাঙালিদের সেই আত্মত্যাগকে স্মরণ করে দিনটি উদ্যাপন করা হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে  আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনকে একটি মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করে।  [বশীর আল হেলাল]

গ্রন্থপঞ্জি  আবুল মনসুর আহমদ, আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর, ঢাকা, ১৯৭৫; আবদুল হক, ভাষা-আন্দোলনের আদি পর্ব, ঢাকা, ১৯৭৬; বদরুদ্দীন উমর, পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি, ১ম খন্ড, ঢাকা, ১৯৭৯।








মুলাদী প্রতিনিধি :
আজ বেলা ১২টায় মুলাদী উপজেলার পৌর সদরের বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে বরিশাল জেলার ভোক্তা অধিকারের উপ পরিচালক শাহ মোঃ শোয়াউব  ও মুলাদী উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জাকির হোসেনের নেতৃত্বে ভোক্তা অধিকার আইনে বন্দরের মনিকা মিষ্টান্ন ভান্ডারে অনিয়মের কারনে ১০,০০০ হাজার, মুলাদী পূরাতন বাসষ্টান বাংলালিংক টাওয়ার সংলগ্ন অপূর্ব বেকারী কারখানায় সেকারিন, সোডা, জামা কাপড় মার্ক দেওয়ার এ্যারারোড, ক্ষতিকারক রং এবং পন্যের মোড়কে মেয়াদ উল্লেখ না থাকায় ১০ হাজার টাকা জরিমান করা হয়েছে এছাড়াও মুলাদী কলেজ গেটে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে মুক্তা ফটোকপির দোকান খোলা রাখায় ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অপরদিকে অভিযানের বিষয়টি জানতে পেরে বন্দরের ঔষধের দোকান সহ অধিকাংশ দোকান পাট বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা অনত্র চলে যায়। এ ব্যাপারে নির্বাহী কর্মকতা জাকির হোসেন জানান পন্যের গুনগত মান এবং ভেজাল বিরোধী অভিযান চলমান থাকবে।

মুলাদী বন্দরের যত্র-তত্র গাড়ি পার্কিয়ে যান চলাচল ব্যহত ॥ 
মুলাদী প্রতিনিধিঃ
মুলাদী বন্দরের সড়ক ও জনপদের ব্যস্ততম সড়কটিতে যত্র-তত্র গাড়ি পার্কিংয়ে যান চলাচল ব্যবহ হওয়ার পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনার আশংকাও ব্যাপক ভাবে বেড়ে গেছে। প্রতিনিয়ত বরিশাল-মুলাদী-বাবুগঞ্জ-হিজলা সড়কের হাজার হাজার মানুষ যাতায়াতের জন্য মুলাদী বন্দরের ব্যস্ততম এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। যে সড়ক সংকির্ন হওয়ায় দুটি বাস এক সাথে যাতায়াত করতে পারেনা সেখানে যে যার মত করে ইজি বাইক, টমটম, অটোভ্যান, মটর সাইকেল সহ অবৈধ যানবাহন যত্র-তত্র রেখে প্রতিনিয়ত জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। সচেতন মহল মনে করে এসব যানবাহন এলোমেলো ভাবে রাখার ফলে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে। মুলাদী বন্দরের প্রতিনিয়ত এমন চিত্র দেখে সাধারন মানুষের মাঝে চলাচলে ভীতি ও শংকার সৃষ্টি হচ্ছে। মুলাদী বন্দরের চলাচলকারী লোকজন প্রত্যাশা করছে প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা এর বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহন করবে। এব্যাপারে আইন শৃঙ্খলা সভায় উত্থাপন করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অচিরেই এর বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন। 

মুলাদী প্রতিনিধিঃ
 মুলাদী বন্দরের পুরভতন স্বর্ণ ব্যবসায়ী ওয়াকার্স পার্টি মুলাদী উপজেলা কমিটির সদস্য ও উপজেলা  শ্রমিক ফেডারশের সাধারন সম্পাদক,  শান্তি জুয়েলার্স এর মালিক মধু সূধন দাসের ছেলে শান্তি রঞ্জন দাস ও নারায়ন বনিকের পুত্র একাধিক মাদক মামলার আসামী বিশ^জিৎ কে ১২ পিস ইয়াবা সহ গ্রেফতার করছে মুলাদী থানা পুলিশ। 
গতকাল বিকাল ৫টায় গোপন সংবাদের সূত্রে মুলাদী থানার এস,আই,জোবায়দুল ইসলাম ও এ,এস,আই জহিরুল ইসলাম স্বর্ণ ব্যবসায়ী শান্তি দাস ও বিশ্বজিৎ কে গ্রেফতার করেন। এ সময় তাদের সাথে থাকা ১২ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে এ,এস,আই জহিরুল ইসলাম। স্থানীয় ব্যবাসীয়ারা জানান দীর্ঘদীন যাবৎ ক্ষমতাসীন একটি মহলের ছত্র ছায়ায় স্বর্নের দোকানের আরালে মাদক বিক্রি করতেন শান্তি রঞ্জন দাস ও তার সহযোগীরা। কিন্তুু প্রমানের অভাবে তাকে গ্রেফতার করা সম্বব হয়নি বলে জানা যায়, তবে কিছু লোকজন জানান ২ বছর আগেও ইয়াবাসহ গ্রেফতার হন শান্তি রঞ্জন দাস। ঐ মহলটির কারনে সে সময় পার পেয়ে যান মাদক সম্রাট শান্তি রঞ্জন ও বিশ^জিৎ, পুলিশের এ অভিযানকে মুলাদী বন্দরের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা স্বাগত জানিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন এ ব্যাপারে মুলাদী থানায় ২ জনকে আসামী করে মাদক আইনে মামলা দায়ের করেন মুলাদী থানা পুলিশ।




ভিডিও দেখুন





সরকারি মুলাদী মাহমুদ্জান মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২০১৮ সালে সরকারি বিদ্যালয় হিসাবে তালিকাভুক্ত করা একটি বহুল পরিচিত সরকারি প্রতিষ্ঠান। সরকারিভাবে পরিচয় লাভ করার পর থেকেই যেন একের পর এক বেরিয়ে আসছে অনিয়ম ও দুর্নীতি। বর্তমানে কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে কোমলমতি গরীব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর জানিয়েছে- স্যার বলেছেন কোচিং করতেই হবে নইলে পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে দেয়া হবে। যদি কোচিং না করি তাহলেও ৫০০ টাকা করে প্রতিমাসে দিতেই হবে।

অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার বাবা নাই মা অন্য জায়গায় বিয়ে করছে মা এখন আর আমাকে বেশি টাকা দিতে পারেন না। আমি কিভাবে এত টাকা দেব। আমি যদি টাকা না দেই স্যার যদি আমাকে স্কুল থেকে বের করে দেবেন আমি কি আর পড়তে পারব না।
ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন বলেন, বাইরের শিক্ষকদের কাছে বিচ্ছিন্নভাবে প্রাইভেট পড়া বন্ধ করার চিন্তা ভাবনা করেই আমরা এই অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা চালু করেছি। ৫০০ টাকা বাধ্যতামূলক করার ব্যাপারটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাইরের চেয়ে তুলনামূলক টাকা একদম কমই দাবি করেছি। যদি কেউ কোচিং না করতে চায় তবে কাউকে জোর করা হবে না ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে- ব্যাপারটা পুরোই বিপরীত। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কোচিং করুক অথবা নাই করুক ৫০০ টাকা করে দেয়ার জন্য প্রধান শিক্ষক আদেশ করেছেন বলে দাবি একাধিক শিক্ষার্থীর । সরকারি আইনে পড়াশোনার মান বাড়াতে অতিরিক্ত ক্লাস নেয়ার বিধানকে টাকা উপার্জনের জন্য অবৈধভাবে ব্যাবহার করছে এই শিক্ষক এবং তাদের স্কুলের পরিচালনা কমিটির সদস্যরা।
আরও জানা গেছে- যে ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুলাদীর দায়িত্বশীল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন নিজেই। জাকির হোসেনকে তার মুঠোফোন যোগাযোগ করে এই কোচিং বাণিজ্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। ঘটনার সত্যতা মিললে জড়িতদের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই সমস্ত অসাধু শিক্ষকদের কারণেই গরীব শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করার মন তৈরি হওয়ার আগেই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কোমলমতি গরিব শিশুদের ভবিষ্যত রক্ষার্থে এই সকল অসাধূ শিক্ষকদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন শিক্ষার্থী এবং তাদের অভভাবকরা।’







সূত্রঃ 


MARI themes

Powered by Blogger.